জীবনানন্দ দাশের কাব্যবৈশিষ্ট্য


এক বিমূঢ় যুগের বিভ্রান্ত কবি জীবনানন্দ৷পৌষের চন্দ্রালোকিত মধ্যরাত্রির প্রকৃতির মতো তাঁর কাব্য কুহেলী কুহকে আচ্ছন্ন৷আধুনিক কবিদের মধ্যে একমাত্র তাঁর কাব্যেই এ-যুগের সংশয়ী মানবাত্মার ক্ষতবিক্ষত রক্তাক্ত পরিচয়টি ফুটে উঠেছে৷
     রবীন্দ্রপরবর্তী শ্রেষ্ঠতম কবিটি সম্পর্কে যথার্থই মন্তব্য করেছেন ডঃ দীপ্তি ত্রিপাঠী৷ বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কাজী নজরুল ইসলাম, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ও জীবনানন্দ দাশ প্রত্যেকরই জন্ম ১৮৯৯ সালে৷ বিখ্যাত মহিলা কবি কুসুমকুমারী দাশ ছিলেন কবির মাতা, এবং পিতা সত্যানন্দ দাশ৷ কবির ডাকনাম ছিল মিলু৷
সাহিত্যজীবনঃ 
    কবির প্রথম কবিতা 'বর্ষ আহন' ১৯১৯ খ্রি. প্রকাশিত হলেও প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'ঝরাপালক' প্রকাশিত হয় ১৯২৮ খ্রি.৷ এরপর 'প্রবাসী', 'বঙ্গবাসী','কল্লোল', 'কালিকলম', 'বিজলী' ও 'প্রগতি' ইত্যাদি পত্রিকায় তাঁর একাধিক কবিতা প্রকাশিত হতে থাকে৷ কবির কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ হল - 'ধূসর পাণ্ডুলিপি' (১৯৩৬ ), 'বনলতা সেন'(১৯৪২ ), 'মহাপৃথিবী'(১৯৪৪ ), 'সাতটি তারার তিমির'(১৯৪৮ ) 'রূপসী বাংলা'(১৯৫৭ ) এবং 'বেলা অবেলা কালবেলা' (১৯৬১ ) ইত্যাদি৷
    জীবনানন্দ দাশ মূলত কবি হলেও তিনি অনেক গল্প ও প্রবন্ধ রচনা করেন৷ এছাড়াও রচনা করেন কয়েকটি উপন্যাস৷ 'কবিতার কথা' (১৯৫৫ ) তাঁর উল্লেখযোগ্য একটি প্রবন্ধগ্রন্থ৷ 'মাল্যবান' (১৯৭৩ ),'সুতীর্থ' (১৯৭৭ ) ও 'জলপাইহাটি' (১৯৮১ ) তাঁর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উপন্যাস৷
   'পরিচয়' পত্রিকায় ১৯৩২ খ্রি. 'ক্যাম্পে' নামে একটি কবিতা লেখেন কবি৷ সজনীকান্ত দাসের মতো কবিরা এটির বিরুদ্ধে অশ্লীলতার অভিযোগ আনেন৷
কাব্যবৈশিষ্ট্যঃ
১) নির্জন বা নির্জনতার কবি৷ এরই সঙ্গে তাঁকে নিঃসঙ্গতার কবিও বলা যেতে পারে৷'আট বছর আগের একদিন', 'বোধ', 'ঘাস', 'হায় চিল' ইত্যাদি এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য৷
২) প্রকৃতিপ্রেমের কবি৷ 'রুপসী বাংলা' কাব্যগ্রন্থে লক্ষ্যণীয়৷
৩) ইতিহাস চেতনাসম্পন্ন কবি৷ 'বনলতা সেন' ,'নগ্ন নির্জন হাত' ও 'হাওয়ার রাত' ইত্যাদি ৷
৪) সমাজ বা কালচেতনার কবি৷ ' ১৯৪৬-৪৭ ','রাত্রি' ইত্যাদি৷
৫) সুররিয়ালিস্ট বা পরাবাস্তববাদী কবি৷
৬) তিনি বেশ কিছু অবিমিশ্রভাবে প্রেমের কবিতা রচনা করেন৷ যেমন- 'তোমায় আমি','তোমায় আমি দেখেছিলাম' ইত্যাদি৷
মূল্যায়নঃ 
    বস্তুতঃ ১৯৩০ এর পরবর্তী বাংলা কবিতাকে জীবননন্দ দাশ ছাড়া কোনোভাবেই ভাবা যায় না৷আধুনিক বাংলা কবিতার বহুমাত্রিক পথযাত্রায় বিশেষ ইন্ধন জুগিয়েছিলেন এই ভাবুক কবি৷ আবার এই বাংলাদশের ধানসিড়ি নদীর তীরে ফিরে আসবেন বলে বাঙালী পাঠককে আশ্বস্ত করে, ১৯৫৪ খ্রি. এই মহান কবি ট্রামগাড়ির ঢাক্কায় স্বর্গধামে যাত্রা করেন৷

আকর গ্রন্থঃ 
বাংলা সাহিত্য পরিচয় - ডঃ পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷
আলোচকঃ ধনঞ্জয় চক্রবর্তী
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
অ্যাডমিন Success বাংলা, কোচবিহার

No comments:

Powered by Blogger.